শ্রমের ব্যক্তিগত যোগান রেখা পশ্চাদমুখী হয় কেন?
মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত আধুনিক তথ্যে ধরে নেওয়া হয় যে, মজুরির হার শ্রমের চাহিদা ও যোগানের দ্বারা নির্ধারিত হয়। সেজন্য শ্রমের চাহিদারেখা এবং যোগান রেখার আকৃতি সম্পর্কে সমক ধারণার প্রয়োজন। প্রথমেই শ্রমের ব্যক্তিগত যোগান রেখা আকৃতি কেমন হয়। সে সম্পর্কে বিশদে ব্যাখ্যা করা হলো-
বিভিন্ন মজুরের হারে একই কাজে নিযুক্ত কোনো একজন শ্রমিক কত ঘন্টা কাজ করতে ইচ্ছুক তা যে রেখার থেকে ধারণা লাভ করা যায়, তাকেই শ্রমের ব্যক্তিগত যোগান রেখা বলে। একই কাজে নিযুক্ত সকল শ্রমিকের একটি নির্দিষ্ট মজুরিতে যোগান রেখা গুলির অনুভূতিক সংযোজনের মাধ্যমে সমাজের শ্রমের মোট যোগান রেখা পাওয়া যায়। সাধারণত শ্রমিকের ব্যক্তিগত যোগান রেখা আকৃতি সম্পর্কে ধরা হয় যে মজুরির হার যত বৃদ্ধি পাবে তত শ্রমের যোগান প্রথমের দিকে বৃদ্ধি পাবে। তবে একটি নির্দিষ্ট স্তরের পর মজুরির হার আরোও বৃদ্ধি পেলে শ্রমের যোগান কমে আসে অর্থাৎ শ্রমের ব্যক্তিগত যোগান রেখাটি প্রথমের দিকে উর্ধ্বমুখী এবং পরবর্তীকালে তা পশ্চাদমুখী হয়।
পাশের রেখাচিত্রে শ্রমের ব্যক্তিগত যোগান রেখা অঙ্কন করে দেখানো হয়েছে। রেখাচিত্রের উল্লম্ব অক্ষে মজুরের হার এবং অনুভূতি অক্ষে শ্রমের যোগানের পরিমাণ পরিমাপ করা হচ্ছে। রেখাচিত্র অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, মজুরির হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শ্রমের যোগানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে OW3 মজুরির হারের পর আরোও মজুরি বৃদ্ধি পেলে, শ্রমের যোগান না বৃদ্ধি পেয়ে বরং হ্রাস পাবে। এই কারণেই শ্রমের বৃদ্ধিগত যোগান রেখা প্রথমে উর্ধ্বমুখী এবং তারপর বাম দিকে পশ্চাদমুখী হয়ে থাকে। এর ব্যাখ্যা হলো নিম্নর রূপ-
মজুরের হার বৃদ্ধি পেলে শ্রমিকের ওপর দুটি প্রভাবের সৃষ্টি হয়, একটি হল আয় প্রভাব এবং অপরটি হল পরিবর্তন প্রভাব। আয় প্রভাবের জন্য শ্রমিক কম শ্রম দান করতে চাইছে এবং বেশি বিশ্রাম ভোগ করতে চাইছে। অন্যদিকে পরিবর্তন প্রভাবের দরুন শ্রমিক বেশি শ্রমদান করতে চাইছে এবং কম বিশ্রাম ভোগ করতে চাইছে। সুতরাং দুটি প্রভাব শ্রমিককে বিপরীত দিকে পরিচালিত করছে মজুরির হার বৃদ্ধি পাওয়ার দরুণ শ্রমের যোগান বাড়বে না কমবে তা নির্ভর করবে আয় প্রভাব এবং পরিবর্তন প্রভাব এর আপেক্ষিক শক্তির ওপর। একটি নির্দিষ্ট মজুরির হারের পর আরো মজুরের হার বৃদ্ধি পেলে আয় প্রভাব পরিবর্তন প্রভাব অপেক্ষা বেশি শক্তিশালী হয় বলে শ্রমের ব্যক্তিগত যোগান রেখা বাম দিকে পশ্চাৎমুখী হয়।